Sunday, April 12, 2015

"গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ" ___রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ
আমার মন ভুলায় রে ।
ওরে কার পানে মন হাত বাড়িয়ে
লুটিয়ে যায় ধূলায় রে ।।
ও যে আমায় ঘরের বাহির করে,
পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে -
(মরি হায় হায় রে)
ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে
যায় রে কোন্ চুলায় রে ।
ও কোন্ বাঁকে কী ধন দেখাবে,
কোন্খানে কী দায় ঠেকাবে-
কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে
ভেবেই না কুলায় রে ।।

"অভিশাপ" – কাজী নজরুল ইসলাম

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মরু কানন গিরি,
সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
যেদিন আমায় খুঁজবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
স্বপন ভেঙ্গে নিশুত রাতে, জাগবে হঠাৎ চমকে
কাহার যেন চেনা ছোয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে-
জাগবে হঠাৎ ছমকে,
ভাববে বুঝি আমিই এসে
বসনু বুকের কোলটি ঘেষে
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শুন্য শয্যা মিথ্যা স্বপন
বেদনাতে চোখ বুজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না,
ব’লবে সবাই – “সেই যে পথিক, তার শেখানো গান না?”
আসবে ভেঙে কান্না!
প’ড়বে মনে আমার সোহাগ,
কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
অশ্রু-হারা কঠিন আঁখি
ঘন ঘন মুছবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ -
কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!
বুকের মালা ক’রবে জ্বালা
চোখের জলে সেদিন বালা
মুখের হাসি ঘুচবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
থাকবে সবাই – থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
আসবে শিশির-রাত্রি!
থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
বঁধুর বুকের পরশনে
আমার পরশ আনবে মনে-
বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না’ক আর সে-
তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে,
আসবে না’ক আর সে!
প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে
মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে,
মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়!
সেই স্মৃতি তো ঐ বিছানায়
কাঁটা হ’য়ে ফুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে,
সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-
দুলবে তরী রঙ্গে,
প’ড়বে মনে সে কোন্ রাতে
এক তরীতে ছিলেম সাথে,
এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,
নদীর দু’ধার এমনি আঁধার
তেমনি তরী ছুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ,
আমার মতন কেঁদে কেঁদে হয়ত হবে অন্ধ-
সখার কারা-বন্ধ!
বন্ধু তোমার হানবে হেলা
ভাঙবে তোমার সুখের মেলা;
দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর,
বইতে প্রাণের শান- এ ভার
মরণ-সনে বুঝবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ফুটবে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী,
আকাশ-ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাঁদনী-
চৈতী-রাতের চাঁদনী।
ঋতুর পরে ফিরবে ঋতু,
সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু!
চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়,
আমার মতন চোখ ভ’রে চায়
যে-তারা তা’য় খুঁজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,
কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন-
টুটবে যবে বন্ধন!
পড়বে মনে, নেই সে সাথে
বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে-
আপনি গালে যাচবে চুমা,
চাইবে আদর, মাগবে ছোঁওয়া,
আপনি যেচে চুমবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হানত্
সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত হ’য়ে শ্রান–
আসবে তখন পান’।
হয়ত তখন আমার কোলে
সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে,
আপনি সেদিন সেধে কেঁদে
চাপবে বুকে বাহু বেঁধে,
চরণ চুমে পূজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

"কৃষ্ণকলি' __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ‐চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে, মুক্তবেণী পিঠের’পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐
চোখ।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ‐পানে হানি যুগল ভুরু শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐
চোখ।
পূবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে, ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা, মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে, আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐
চোখ।
এমনি করে কাজল কালো মেঘ জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া আষাঢ়মাসে নামে তমাল‐বনে।
এমনি করে শ্রাবণ‐রজনীতে হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐
চোখ।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ‐চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস, লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐
চোখ।

তোমাকে ভালবাসি ____ রেদোয়ান মাসুদ

আমি কখনও বলবোনা
তোমাকে ভালবাসি
হৃদয় ডাকছে তোমার কাছে আসি
শুধু আমার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ
চোখ কি বলে?
তখনই বুঝবে তুমি
কতটা ভালবাসি তোমায় আমি।

আমি কখনও বলবোনা
তোমাকে ভালবাসি
কাছে এসো একবার
তোমাই দেখি।
শুধু কান দিয়ে নিরবে আমার কথা শুনো
শ্রুতি কেমন, কন্ঠ কি বলে ?
তখনই বুঝবে তুমি
কতটা ভালবাসি তোমায় আমি।
আমি কখনও বলবোনা
তোমাকে ভালবাসি
কাছে এসো
মন খুলে হাসি।
শুধু আমার হাতে একবার স্পশ করে দেখ
কাপছে তোমার হৃদয় খানি
আর তখনই বুঝবে তুমি
কতটা ভালবাস আমায় তুমি।

“আর কত ভালবাসলে ভালবাসবে আমায়” _____ রেদোয়ান মাসুদ

আর কত ভালবাসলে
ভালবাসবে তুমি আমায়?
আর কত কাঁদলে
গলবে তোমার হৃদয়?
আর কত রাত জাগলে
বুঝবে তুমি আমায়?
আর কত অপেক্ষা করলে
শেষ হবে অপেক্ষা আমার?
আর কত দিন কাটলে
আসবে তুমি কাছে আমার?
আর কত পোড়ায়ে
খাটি করবে আমার হৃদয়?
আর কত সাগরে ভাসলে
দেখা দিবে তুমি আমায়?
আর কত পরীক্ষার পর
শেষ হবে আমাকে জানার?
আর কত ভালবাসলে
ভালবাসবে তুমি আমায়?
আর কত কাঁদলে
গলবে তোমার হৃদয়?

বঁধু, মিটিলনা সাধ __কাজী নজরুল ইসলাম

বঁধু, মিটিলনা সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়
তাই আবার বাসিতে ভালো আসিব ধরায়।
আবার বিরহে তব কাঁদিব
আবার প্রণয় ডোরে বাঁধিব
শুধু নিমেষেরি তরে আঁখি দুটি ভ’রে
তোমারে হেরিয়া ঝ’রে যাব অবেলায়।
যে গোধূলি-লগ্নে নববধূ হয় নারী
সেই গোধূলি-লগ্নে বঁধু দিল
আমারে গেরুয়া শাড়ি
বঁধু আমার বিরহ তব গানে
সুর হয়ে কাঁদে প্রাণে প্রাণে
আমি নিজে নাহি ধরা দিয়ে
সকলের প্রেম নিয়ে দিনু তব পায়।

"আমায় নহে গো" __কাজী নজরুল ইসলাম

আমায় নহে গো ভালোবাসো শুধু
ভালোবাসো মোর গান
বনের পাখিরে কে চিনে রাখে
গান হলে অবসান ।

চাদেরে কে চায় জোসনা সবাই যাচে
গীত শেষে বীণা পড়ে থাকে ধূলি মাঝে
তুমি বুঝিবে না
আলো দিতে কত পোড়ে
কত প্রদীপের প্রাণ ।
যে কাটা লতার আখিঁজল
ফুল হয়ে উঠে ফুটে
ফুল নিয়ে তার দিয়েছো কি কিছু
শূন্য পত্র পুটে ।
সবাই তৃষ্ণা মেটায় নদীর জলে
কি তৃষা জাগে সে নদীর হিয়া তলে
বেদনার মহা সাগরের কাছে করো সন্ধান ।

"আসমানী" ___জসীম উদ্‌দীন

আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমন্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক’খান হাড়,
সাক্ষী দেছে অনাহারে কদিন গেছে তার।
মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি
থাপড়েতে নিবিয়ে গেছে দারুণ অভাব আসি।
পরণে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস,
সোনালী তার গার বরণের করছে উপহাস।
ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,
সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।
বাঁশীর মত সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে,
হয়নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।
আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরে
ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল-বিল-বিল করে।
ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,
সেই জলেতে রান্না খাওয়া আসমানীদের চলে।
পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বর তার,
বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর।
খোসমানী আর আসমানী যে রয় দুইটি দেশে,
কও তো যাদু, কারে নেবে অধিক ভালবেসে?

আমি চিরতরে দূরে চলে যাব ___কাজী নজরুল ইসলাম

আমি চির তরে দূরে চলে যাবো
তবু আমারে দিবোনা ভুলিতে,
আমি বাতাস হইয়া, জড়াইবো কেশ
বেনী যাবে যবে খুলিতে।
তোমার সুরের নেশায় যখন
ঝিমাবে আকাশ, কাঁদিবে পবন,
রোদন হইয়া আসিব তখন
তোমারো বক্ষে দুলিতে।
আসিবে তোমার পরম উৎসব
কত প্রিয়জন, কে জানে
মনে পড়ে যাবে কোন সেই ভিখারী
পাইনি ভিক্ষা এখানে।
তোমার কুঞ্জ পথে যেতে হায়
চমকে থামিয়া যাবে বেদনায়
দেখিব কে যেন মরে পড়ে আছে
তোমার পথের ধূলিতে।।

"সখী, ভালোবাসা কারে কয়" ___রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সখী, ভাবনা কাহারে বলে।
সখী, যাতনা কাহারে বলে ।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—
সখী, ভালোবাসা কারে কয় !
সে কি কেবলই যাতনাময় ?
সে কি কেবলই চোখের জল ? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস ?
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ।
আমার চোখে তো সকলই শোভন,
সকলই নবীন, সকলই বিমল, সুনীল আকাশ, শ্যামলকানন,
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো ।
তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়,
হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়—
না জানে বেদন, না জানে রোদন,
না জানে সাধের যাতনা যত ।
ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে,
জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়,
হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে আকাশের তারা তেয়াগে কায় ।

‘‘দেখা’’ ___সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

-ভালো আছো?
-দেখো মেঘ, বৃষ্টি আসবে?
-ভালো আছো?
-দেখো ঈশান কোণের কালো,
শুনতে পাচ্ছো ঝড়?
-ভালো আছো?
-এই মাত্র চমকে উঠলো ধবধবে বিদ্যুৎ।
-ভালো আছো?
-তুমি প্রকৃতিকে দেখো
-তুমি প্রকৃতিকে আড়াল
করে দাঁড়িয়ে রয়েছো
-আমি তো অণূর অনু, সামান্যের চেয়েও
সামান্য
-তুমিই তো জ্বালো অগ্নি, তোলো ঝড়,
রক্তে এত
উম্মাদনা
-দেখো সত্যিকার বৃষ্টি, দেখো সত্যিকার
ঝড়
-তোমাকে দেখাই আজও শেষ হয়নি,
তুমি ভালো আছো?

"নিমন্ত্রণ" --জসীমউদদীন

তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমদের ছোট গাঁয়
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভায়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।
ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,
কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া।
ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী,
পারের খবর টানাটানি করি-
বিনাসূতি মালা গাঁথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;
বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তীরের হিয়া।
তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে- নরম ঘাসের পাতে,
চুম্বন রাখি অম্বরখানিরে মেজে লয়ো নিরালাতে।
তেলাকুচ-লতা গলায় পরিয়া
মেঠো ফুলে নিও আঁচল ভরিয়া,
হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে,
তোমার পায়ের রঙখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।
তুমি যদি যাও আমাদের গাঁয়ে, তোমারে সঙ্গ করি
নদীর ওপারে চলে যাই তবে লইয়া ঘাটের তরী
মাঠের যত না রাখাল ডাকিয়া,
তব সনে দেই মিতালি করিয়া,
ঢেলা কুড়াইয়া গড়ি ইমারত সারা দিনমান ধরি
সত্যিকারের নগর ভুলিয়া নকল নগর গড়ি।
তুমি যদি যাও – দেখিবে সেখানে মটর-লতার সনে,
সীম-আর-সীম হাত বাড়ালেই মুঠি ভরে সেইখানে।
তুমি যদি যাও সে-সব কুড়ায়ে,
নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,
খাব আর যত গেঁয়ো চাষিদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,
হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব জনে জনে।
তুমি যদি যাও- শামুক কুড়ায়ে, খুব-খুব বড় করে
এমন একটি গাঁথিব মালা যা দেখনি কাহারো করে;
কারেও দেব না, তুমি যদি চাও
মনের খুশিতে দিয়ে দেব তাও,
গলায় পরিবে ঝুমঝুম রবে পথেরে মুখর করে,
হাসিব খেলিব গাহিব নাচিব সারাটি গেরাম ভরে।
খুব ভোর করে উঠিতে হইবে, সুয্যি উঠারও আগে,
কারেও কবি না দেখিস পায়ের শব্দে কেহ না জাগে।
রেল সড়কের ছোট খাদ ভরে
ডানকিনে মাছ কিলবিল করে;
কাদার বাঁধাল গাঁথি মাঝামাঝি জল সেঁচে আগেভাগে,
সব মাছগুলো কুড়ায়ে আনিব কাহারো জানার আগে।
ভর দুপুরেতে একরাশ কাদা আর একরাশ মাছ,
কাপড়ে জাড়ায়ে ফিরিয়া আসিব আপন বাড়ির কাছ;
'ওরে মুখ-পোড়া ওরে রে বাঁদর।'
গালি-ভরা মার অমনি আদর,
কতদিন আমি শুনি নারে ভাই, আমার মায়ের পাছ;
যাবি তুই ভাই, আমাদের গাঁয়ে যেথা ঘন কালো গাছ।
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়,
ঘন কালো বন-মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।
গাছের ছায়ায় বনের লতায়,
মোর শিশুকাল, লুকায়েছে হায়!
আজিকে সে-সব সরায়ে সরায়ে খুঁজিয়া লইব তায়,
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।

"একবার তুমি" __শক্তি চট্টোপাধ্যায়

একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা করো–
দেখবে, নদির ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছে
পাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জল
নীল পাথর লাল হচ্ছে, লাল পাথর নীল
একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা করো ।

বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
সমস্ত পায়ে-হাঁটা পথই যখন পিচ্ছিল, তখন ওই পাথরের পাল একের পর এক বিছিয়ে
যেন কবিতার নগ্ন ব্যবহার , যেন ঢেউ, যেন কুমোরটুলির সালমা-চুমকি- জরি-মাখা প্রতিমা
বহুদূর হেমন্তের পাঁশুটে নক্ষত্রের দরোজা পর্যন্ত দেখে আসতে পারি ।
বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল
চিঠি-পত্রের বাক্স বলতে তো কিছু নেই – পাথরের ফাঁক – ফোকরে রেখে এলেই কাজ হাসিল-
অনেক সময়তো ঘর গড়তেও মন চায় ।
মাছের বুকের পাথর ক্রমেই আমাদের বুকে এসে জায়গা করে নিচ্ছে
আমাদের সবই দরকার । আমরা ঘরবাড়ি গড়বো – সভ্যতার একটা স্থায়ী স্তম্ভ তুলে ধরবো
রূপোলী মাছ পাথর ঝরাতে ঝরাতে চলে গেলে
একবার তুমি ভালবাসতে চেষ্টা করো ।

ভাগ্যের পরিহাস ___রেদোয়ান মাসুদ

সাগরকে বলছিলাম এক ফোটা লোনা পানি দিতে
বাতাসকে বলছিলাম একটু গন্ধ দিতে
পাখিকে বলছিলাম একটা গান শুনাতে
আকাশকে বলছিলাম একটু বৃষ্টি দিতে
কিন্তু কেউ রাজি হলো না।
সাগর বলল এখন সাগরে পানি নেই
বাতাস বলল এখনও বাগানে ফুল ফুটেনি
পাখি বলল এখন গান গাওয়ার সময় নেই
আকাশ বলল আকাশে এখনও মেঘ জমেনি।
অনেক দিন পর সবাই রাজি হল
সাগর লোনা পানি দিয়ে গেল
বাতাস নাকে গন্ধ দিয়ে গেল
পাখি গান শুনিয়ে গেল
আকাশ বৃষ্টিতে ভিজিয়ে গেল।
হঠাৎ একদিন অবাক কান্ড ঘটলো
সাগর মরুভূমি হয়ে গেল
বাতাস নিস্তব্দ হয়ে গেল
পাখির কণ্ঠ বন্ধ হয়ে গেল
আকাশ অন্ধকার হয়ে গেল।
তারপর যা হবার তাই হল
তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে গেল
বুকের ভিতর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল
চারিদিকে কোলাহল শূন্য হয়ে গেল
চোখ দূটি চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল।

এক কোটি বছর তোমাকে দেখি না ___মহাদেব সাহা

এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না
একবার তোমাকে দেখতে পাবো
এই নিশ্চয়তাটুকু পেলে-
বিদ্যাসাগরের মতো আমিও সাঁতরে পার হবো ভরা দামোদর...
কয়েক হাজার বার পাড়ি দেবো ইংলিশ চ্যানেল;
তোমাকে একটিবার দেখতে পাবো এটুকুভরসা পেলে
অনায়াসে ডিঙাবো এই কারার প্রাচীর,
ছুটে যবো নাগরাজ্যে পাতালপুরীতে
কিংবা বোমারু বিমান ওড়া
শঙ্কিত শহরে।
যদি জানি একবার দেখা পাবো
তাহলে উত্তপ্ত মরুভূমি
অনায়াসে হেঁটে পাড়ি দেবো,
কাঁটাতার ডিঙাবো সহজে,
লোকলজ্জা ঝেড়ে মুছে
ফেলে যাবো যে কোনো সভায়
কিংবা পার্কে ও মেলায়;
একবার দেখা পাবো শুধু এই আশ্বাস পেলে
এক পৃথিবীর এটুকু দূরত্ব
আমি অবলীলাক্রমে পাড়ি দেবো।
তোমাকে দেখেছি কবে, সেই কবে, কোন বৃহস্পতিবার
আর এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না।

"রাখাল ছেলে" __জসীমউদ্‌দীন

“রাখাল ছেলে ! রাখাল ছেলে ! বারেক ফিরে চাও,
বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?”
ওই যে দেখ নীল-নোয়ান সবুজ ঘেরা গাঁ,
কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা,
সেথায় আছে ছোট কুটির সোনার পাতায় ছাওয়া,
সাঁঝ-আকাশের ছড়িয়ে-পড়া আবীর রঙে নাওয়া,
সেই ঘরেতে একলা বসে ডাকছে আমার মা-
সেথায় যাব, ও ভাই এবার আমায় ছাড় না।”
“রাখাল ছেলে ! রাখাল ছেলে ! আবার কোথা ধাও,
পুব আকাশে ছাড়ল সবে রঙিন মেঘের নাও।”
“ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে,
সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।
আমার সাথে করতো খেলা প্রভাত হাওয়া, ভাই,
সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই।
চলতে পথে মটরশুঁটি জড়িয়ে দুখান পা,
বলছে ডেকে, ‘গাঁয়ের রাখাল একটু খেলে যা।’
সারা মাঠের ডাক এসেছে, খেলতে হবে ভাই।
সাঁঝের বেলা কইব কথা এখন তবে যাই।’
“রাখাল ছেলে ! রাখাল ছেলে ! সারাটা দিন খেলা,
এ যে বড় বাড়াবাড়ি, কাজ আছে যে মেলা।”
কাজের কথা জানিনে ভাই, লাঙল দিয়ে খেলি
নিড়িয়ে দেই ধানের ক্ষেতের সবুজ রঙের চেলী।
রিষে বালা নুইয়ে গলা হলদে হওয়ার সুখে।
টির বোনের ঘোমটা খুলে চুমু দিয়ে যায় মুখে।
ঝাউয়ের ঝাড়ে বাজায় বাঁশী পউষ-পাগল বুড়ী,
আমরা সেথা চষতে লাঙল মুশীদা-গান জুড়ি।
খেলা মোদের গান গাওয়া ভাই, খেলা-লাঙল-চষা,
সারাটা দিন খেলতে জানি, জানিই নেক বসা’।

"চাতকপাখি" __আফরোজা খান

পথটা স্বপ্নহীন তবুও
হেটে চলি সেই পথে
স্বপ্নকে ছুয়ে দেখবো বলে৷
জানি তুমি ধূসর মরুভূমি
তারপরও আশায় থাকি
হয়তো ভুলেও কখনো
একটু বৃষ্টি নামাবে বলে৷
আমি জনম জনম চাতকপাখি
হয়ে থাকবো সেই
বৃষ্টিতে ভিজবো বলে!

"সোনার তরী" __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কুলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা
কাটিতে কাটতে ধান এল বরষা।

একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা
চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়া-মসিমাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাত বেলা
এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলিনিরুপায়
ভাঙে দু ধারে –
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে,
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কুলেতে এসে।
যত চাও তত লও তরণী, পরে।
আর আছে? আর নাই, দিয়েছি ভরে।
এত কাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলই দিলাম তুলে
থরে বিথরে –
এখন আমারে লহো করুণা করে।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই-ছোটো সে তরী
আমারই সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণ গগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শুন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি-
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।

কে? _ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

বল দেখি এ জগতে ধার্মিক কে হয়,
সর্ব জীবে দয়া যার, ধার্মিক সে হয়।
বল দেখি এ জগতে সুখী বলি কারে,
সতত আরোগী যেই, সুখী বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে বিজ্ঞ বলি কারে,
হিতাহিত বোধ যার, বিজ্ঞ বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে ধীর বলি কারে,
বিপদে যে স্থির থাকে, ধীর বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে মূর্খ বলি কারে,
নিজ কার্য নষ্ট করে, মূর্খ বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে সাধু বলি কারে,
পরের যে ভাল করে, সাধু বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে জ্ঞানী বলি কারে,
নিজ বোধ আছে যার জ্ঞানী বলি তারে।

"আশা" __কাজী নজরুল ইসলাম

হয়ত তোমার পা'ব দেখা,
যেখানে ঐ নত আকাশ চুমছে বনের
সবুজ রেখা।।
ঐ সুদূরের গাঁয়ের মাঠে,
আ’লের পথে বিজন ঘাটে;
হয়ত এসে মুচকি হেসে
ধ’রবে আমার হাতটি একা।।
ঐ নীলের ঐ গহন-পারে ঘোম্টা-
হারা তোমার চাওয়া,
আনলে খবর গোপন দূতী দিক্পারের
ঐ দখিনা হাওয়া।।
বনের ফাঁকে দুষ্টু তুমি
আসে- যাবে নয়্না চুমি’
সেই সে কথা লিখছে হেতা
দিগ্বলয়ের অরুণ-লেখা।

‘‘তুমি চলে যাবে বলতেই’’ ___মহাদেব সাহা

তুমি চলে যাবে বলতেই বুকের মধ্যে
পাড় ভাঙার শব্দ শুনি-
উঠে দাঁড়াতেই দুপুরের খুব গরম
হাওয়া বয়,
মার্সির কাঁচ ভাঙতে শুরু করে;
দরোজা থেকে যখন এক পা বাড়াও আমি
দুই চোখে কিছুই দেখি না-
এর নাম তোমার বিদায়,
আচ্ছা আসি, শুভরাত্রি,
খোদাহাফেজ।
তোমাকে আরেকটু বসতে বললেই তুমি যখন
মাথা নেড়ে না, না বলো
সঙ্গে সঙ্গে সব মাধবীলতার ঝোপ
ভেঙে পড়ে;
তুমি চলে যাওয়ার জন্যে যখন
সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকো
তৎক্ষণাৎ পৃথিবীর আরো কিছু বনাঞ্চল উজাড়
হয়ে যায়,
তুমি উঠোন পেরুলে আমি কেবল
শূন্যতা শূন্যতা
ছাড়া আর কিছুই দেখি না
আমার প্রিয় গ্রন্থগুলির সব
পৃষ্ঠা কালো কালিতে ঢেকে যায়।
অথচ চোখের আড়াল অর্থ কতোটুকু যাওয়া,
কতোদূর যাওয়া-
হয়তো নীলক্ষেত থেক বনানী,
ঢাকা থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট..
তবু তুমি চলে যাবে বলতেই বুকের
মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে
সেই থেকে অবিরাম কেবল পাড় ভাঙার শব্দ শুনি
পাতা ঝরার শব্দ শুনি-
আর কিছুই শুনি না।

"বধু কোন আলো লাগলো চোখে" ______রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বধু কোন আলো লাগলো চোখে ।।
বুঝি দীপ্তি রূপে ছিলে সুর্যলোকে
ছিল মন তোমারই প্রতীক্ষা করি
যুগে যুগে দিন রাত্রি ধরি
ছিল মর্ম বেদনা ঘন অন্ধকারে
জনম জনম গেল বিরহ শোকে
বধু কোন আলো লাগলো চোখে ।।
অস্ফুট মঞ্জরি কুঞ্জ বনে
সংগীত শুন্য বিষন্ন মনে ।।
সংগী রিক্ত চীর দুঃখ রাতি
পোহাব কি নির্জনে শয়ন পাতে
সুন্দর হে সুন্দর হে
বর মাল্যকখানি তব আন বহে
তুমি আন বহে
অবগুন্ঠনে ছায়া ঘুচায়ে দিয়ে
হের লজ্জিত স্মিত মুখ শুভ আলোকে
বধু কোন আলো লাগলো চোখে ।।

“ভালবাসি” __ রেদোয়ান মাসুদ

শুধু একটি বার বল ভালবাসি
তোমাকে আর কোনদিন ভালবাসতে হবে না।
মরুভূমির তপ্ত বালিতেও পা দিতে হবে না।
আমার জন্য তোমকে নিশি রাতে পা ভিজাতে হবে না।
আকাশ বাতাস শুনুক তোমার প্রতিধ্বনি।
সবাই জানুক কেউ আমাকে ভালবেসেছিল।
আমার হৃদয়ের ডাকে কেউ সাড়া দিয়েছিলো।
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।
কাছে আস বা না আস, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।
হৃদয়কে না হয় একটি বার হলেও সান্তনা দিতে পারব
কেউতো অন্তত একটি বার হলেও প্রাণের ছোয়া দিয়েছিল।
কয়েক সেকেন্ড এর জন্য হলেও শুকিয়ে যাওয়া নদীতে
আবার ঝড়ের বেগে অশ্রুর বন্যা বয়েছিল।
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।
এর জন্য তুমি কি চাও?
হয়তোবা আমি তোমাকে আকাশের চাঁদটি এনে দিতে পারবোনা
পূর্ব দিকে উঠা সূর্যটিকেও হাতে তুলে দিতে পারবোনা।
কিন্তু পারবো তোমার জন্য আমি রজনীর পর রজনী জেগে থাকতে
পারবো আজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে।
হয়তো আমার এই শুন্য হৃদয়ে এক সময় কেউ স্থান করে নিবে
কিন্তু তুমিতো আর আমার হলে না।
কি হবে ভরে এই শুন্য হৃদয় ?
আমি তো চাইনি অন্য কেউ এসে আমার হৃদয়ে গোলাপ ফুটাক
পোড়া মন আবার সতেজ হয়ে উঠুক।
আমি চেয়েছি শুধু তোমার মুখ থেকে একটি বার হলেও
প্রতিধ্বনি হয়ে বেজে উঠুক একটি শব্দ “ভালবাসি”
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।

‘‘হঠাৎ দেখা’’ ___রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন।
আগে ওকে বারবার দেখেছি
লালরঙের শাড়িতে-
দালিম-ফুলের মতো রাঙা;
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলন-চাঁপার মতো চিকন-গৌর মুখখানি ঘিরে।
মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা;
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।
হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার।
সমাজবিধির পথ গেল খুলে,
আলাপ করলেম শুরু—
‘কেমন আছ’, ‘কেমন চলছে সংসার’
ইত্যাদি।
সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,
কোনোটা বা দিলেই না।
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায়—
কেন এ-সব কথা,
এর চেয়ে অনেক ভালো চুপ ক’রে থাকা।
আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে।
এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে।
মনে হল কম সাহস নয়-
বসলুম ওর এক-বেঞ্চিতে।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে,
‘কিছু মনে কোরো না,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার।
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই;
দূরে যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই।
তাই, যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে।
সত্য করে বলবে তো?’
আমি বললেম, ‘বলব।’
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
‘আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে-
কিছুই কি নেই বাকি?’
একটুকু রইলেম চুপ করে;
তারপর বললেম,
‘রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।’
খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম না কি।
ও বললে, ‘থাক্, এখন যাও ও দিকে।’
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে।
আমি চললেম একা।

অবশেষে তোমাকে হারাতে চাইনি ____ রেদোয়ান মাসুদ

তোমার ডাকে সাড়া দিতে চাইনি
তবুও দিয়েছি।
তোমার কাছে আসতে চাইনি
তবুও এসেছি।
তোমাকে কখনও ডাকতে চাইনি
তবুও ডেকেছি।
তোমার মায়ায় জড়াতে চাইনি
তবুও জড়িয়েছি।
তোমার বুকে মাথা গুঁজতে চাইনি
তবুও গুঁজেছি।
তোমার হাসিতে হাসতে চাইনি
তবুও হেসেছি।
তোমার কান্নায় কাঁদতে চাইনি
তবুও কেদেছি।
তোমায় ভালবাসতে চাইনি
তবুও ভালবেসেছি।
অবশেষে তোমাকে হারাতে চাইনি
তবুও হারিয়েছি...!!!

প্রিয় জন্মভূমি __ রেদোয়ান মাসুদ

আমি না হয় হেরে যাব
তবুও জিতে যাও তুমি ।
আমি না হয় কেঁদে যাব
তবুও হেসে থাক তুমি
আমি না হয় দুঃখে থাকব
তবুও সুখে থাক তুমি ।
আমি না হয় সাগরে ভাসব
তবুও ডাঙ্গায় থাক তুমি ।
আমি না হয় নিভে যাব
তবুও জ্বলে থেকো তুমি ।
আমি না হয় রোদে পুড়ব
তবুও ছায়ায় থাক তুমি ।
আমি না হয় থেমে যাব
তবুও হেটে যাও তুমি ।
আমি না হয় না খেয়ে থাকব
তবুও খেয়ে থাক তুমি ।
আমি না হয় গোলাপ ফুটাব
যদি ঘ্রান নেও তুমি ।
আমি না হয় নৌকা বাইব
যদি যাত্রী হও তুমি ।
আমি না হয় আমার মত থাকব
তবুও তোমার মত থাক তুমি ।
আমি না হয় জীবন দিব
তবুও স্বাধীন থাক তুমি ।
সবই করব তোমার জন্য
যদি ভাল থাক তুমি
ও আমার প্রিয় জন্মভূমি ।

"উপেক্ষা" ___নির্মলেন্দু গুণ

অনন্ত বিরহ চাই, ভালোবেসে
কার্পণ্য শিখিনি৷
তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে
ভুলে যেতে পারি
সমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা
প্রেম; যদি চাও
ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে
উপেক্ষা দেখাও৷
আমি কি ডরাই সখি, ভালোবাসা
ভিখারি বিরহে?

শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন ____জীবনানন্দ দাস

শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন,
বনলতা সেন ।
কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা
মাছরাঙা ভোলেনি তো দুপুরের খেলা
শালিখ করে না তার নীড় অবহেলা
উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন,
তুমি নাই বনলতা সেন ।
তোমার মতন কেউ ছিল কি কোথাও ?
কেন যে সবের আগে তুমি চলে যাও।
কেন যে সবের আগে তুমি
পৃথিবীকে করে গেলে শূন্য মরুভূমি
(কেন যে সবার আগে তুমি)
ছিঁড়ে গেলে কুহকের ঝিলমিল টানা ও পোড়েন,
কবেকার বনলতা সেন ।
কত যে আসবে সন্ধ্যা প্রান্তরে আকাশে,
কত যে ঘুমিয়ে রবো বস্তির পাশে,
কত যে চমকে জেগে উঠবো বাতাসে,
হিজল জামের বনে থেমেছে বুঝি রাত্রির ট্রেন,
নিশুথির বনলতা সেন।

স্বাধীনতা তুমি __শামসুর রাহমান

স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

স্বাধীনতা ___রেদোয়ান মাসুদ

চল্লিশ বছর পরেও মোরা পাইনি স্বাধীনতা
স্বাধীন দেশে বাস করেও মোদের কাটেনি হতাশা,
পেয়েছি শুধু পৃথিবীর বুকে একটি রঙ্গিন পতাকা
বুকে জড়িয়ে সেই পতাকা , করছি শুধুই প্রত্যাশা ।
ত্রিশ লক্ষ জীবনের বিনিময়ে এনেছিল স্বাধীনতা
আড়াই লক্ষ মা বোনদের হয়েছিল সর্বনাশা,
বুকের তাজা রক্ত দিয়ে করেছিল মুক্তির প্রত্যাশা
পরের প্রজন্ম থাকবে মুখে এই তো ছিল আশা ।
স্বাধীন দেশে  বাস করে মোরা পেয়েছি কি সেই ভাষা
যার জন্য ৫২ সালে রক্ত ঝড়েছিল তাজা ,
আজও সেই মা –বোনদের হচ্ছে সর্বনাশা
দুষ্ট লোকের মরন ছোবলে থেকে নেইকো মুক্তির আশা ।
আজও সেই স্বাধীন দেশে আটকে রেখে ফাইল পত্র-খাতা
কিছু লোক ভরছে ,পকেট পেট করছে মোটা তাজা ,
স্বাধীনতা বিরোধী সেই হানাদারদের কথা আজও মোদের জানা
ভুলাতে চাইছে সেই কথা তাঁরা , বলে ধর্মের কথা ।
সবুজ ঘাসে রক্ত পড়ে হয়েছিল লাল সবুজের পতাকা
সেই পতাকা গাড়িতে বেধে বীরের বেশে চলছে হায়নাদাররা ,
আজও সেই যুদ্ধাহতরা পাতছে মানুষের কাছে থালা
যাদের জন্য মাথা উচু করে আছি , তাদের কেনা এই অবস্থা ?
বীরঙ্গনারা  আজও কাদছে সেই হায়নাদারদের ভয়ে
মুখ খুললে যাবে জীবন স্বাধীন এই দেশে ,
স্বাধীনতার জন্য গিয়েছিল যুদ্ধে দিন, মুজুর চাষা
আজও তাদের মুখে জুলছেনা দুই মুঠো ভাত ,এই কি ছিল আশা ?
স্বাধীনতা মানে কি কিছু লোকের বুক ফুলিয়ে চলা?
স্বাধীনতা মানে কি তাদের পায়ের নিচে জনগণ ধুলা?
স্বাধীন দেশে কেন মোরা আজ ও দেখেছি পরাধীনতা?
চাইনা মোরা , চাইনা মোরা এমন স্বাধীনতা !
স্বাধীনতা দিবে বাক স্বাধীনতা , স্বাধীনতা দিবে মুক্তির বারতা
এইতো মোদের ভাষা , স্বাধীন দেশে বাস করবো মোরা মিটাবো মনের আশা।
কাব্যগ্রন্থঃ মায়ের ভাষা
০৬-০৮-২০১৩ ইং
মোড়ল কান্দি- শরীয়তপুর

হতাশা __ রেদোয়ান মাসুদ

শত হতাশা ডুবাবে তোমায় হইওনা নিরাশা
কত কিছু রয়েছে বাকি বুকে বাধ আশা।
সূর্য, সে উকি দিচ্ছে মেঘের আড়ালে
ধৈর্য ধর একটু পরে মেঘ কেটে যাবে ।
নদীতে উঠেছে ঢেউ মাঝি ধরেছে হাল
শক্ত হাতে ধরিলে হাল ভাঙ্গবেনা নাওয়ের পাল ।
পেটের তারনায় ঘর ছেড়েছে তাঁরা গায়ে জড়িয়ে শাল
চেয়ে দেখ তীব্র শীতের মাঝে তাঁরা ফেলেছে নদীতে মস্ত জাল।
কত বাধা আসবে সামনে কত থাকবে পিছুটান
সবকিছু তোমার ফেলিতে হবে পিছনে যদিও যায় জান ।
আস্তা কুড়ে বাস করে সবই হইবে মিছা
সবকিছু তোমার জয় করিতে হইবে দূর করিতে হতাশা ।
কাব্যগ্রন্থঃ মায়ের ভাষা
১৬-০২-২০১৩ ইং
আজিমপুর-ঢাকা

‘‘ভালবাসার সংজ্ঞা’’ ____রফিক আজাদ

দূরে আছো দূরে
ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি,
পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা;
ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া,
বিরহ-বালুতে খালিপায়ে হাঁটাহাঁটি;
ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি
খুব করে ঝুঁকে থাকা;
ভালোবাসা মানে ব্যাপক বৃষ্টি, বৃষ্টির একটানা ভিতরে-বাহিরে
দুজনের হেঁটে যাওয়া;
ভালোবাসা মানে ঠাণ্ডা কফির
পেয়ালা সামনে
অবিরল কথা বলা;
ভালোবাসা মানে শেষ হয়ে-
যাওয়া কথার পরেও
মুখোমুখি বসে থাকা।

নিরবেই কাঁদব __রেদোয়ান মাসুদ

আমি নিরবেই কাঁদব
নিরবেই হাসব,
কখনও বলব না আর
আমার কান্না পাচ্ছে দেখে যাও একবার ।
.
আমি নিরবেই জ্বলব
নিরবেই মরব
কখন বলব না আর
মরার বেলা এই তৃষ্ণার্ত ঠোটে একফোটা জল দাও একবার।
.
আমি নিরবেই সইব
নিরবেই দেখব
কখনও বলব না আর
পোড়া হৃদয়খানি দেখে যাও একবার ।
.
আমি নিরবেই ভালবাসব
নিরবেই হৃদয়ে রাখব
কখনও বলব না আর
কত ভালভালবাসি তোমায় চেয়ে দেখ একবার ।
.
আমি নিরবেই ভাবব
নিরবেই কাছে রাখব
কখনও বলব না আর
একবার কাছে এসে দেখে যাও মুখটি আমার ।
.
আমি নিরবেই অদৃশ্য হব
নিরবেই চলে যাব
কখনও বলব না আর
চীর তরে চলে যাচ্ছি বিদায় দাও এবার ।

ভালোবাসি ভালোবাসি ___রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভালোবাসি ভালোবাসি
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায়
বাজায় বাঁশি ভালোবাসি ভালোবাসি
আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে
দিগন্তে কার কালো আঁখি আঁখির জলে যায় ভাসি
ভালোবাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি
সেই সূরে সাগর কূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে
সেই সূরে সাগর কূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে
সেই সুরে বাজে মনে অকারনে
ভুলে যাওয়া গানের বাণী
ভোলা দিনের কাঁদন
কাঁদন হাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি!!
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায়
বাজায় বাঁশি
ভালোবাসি ভালোবাসি

"যখন বৃষ্টি নামল" ___শক্তি চট্টোপাধ্যায়

বুকের মধ্যে বৃষ্টি নামে নৌকা টলমল,
কুল ছিঁড়ে আজ অকূলে যাই এমন সম্বল
নেই নিকটে; হয়ত ছিল বৃষ্টি আসার আগে!
চলৎশক্তিহীন হয়েছি তাই কি মনে জাগে ?
পোড়োবাড়ির স্নৃতি আমার স্বপ্নে মেশা দিন
চলৎশক্তিহীন হয়েছি, চলৎশক্তিহীন।
বৃষ্টি নামল যখন আমি উঠোন-পানে একা,
দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম তোমার পাব দেখা।
হয়ত মেঘে-বৃষ্টিতে বা শিউলিগাছের তলে
আজানুকেশ ভিজিয়ে নিচ্ছো আকাশ-ছেঁচা জলে।
কিন্তু তুমি নেই বাহিরে, অন্তরে মেঘ করে,
ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে।।

আবার আসিব ফিরে ___জীবনানন্দ দাশ

আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে — এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় — হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হব — কিশোরীর — ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে-ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;
হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেচাঁ ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;
রূপসা ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক শাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙা রায় — রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক: আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয় ___রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে
আমার না-থাকা জুড়ে।
জানি চরম সত্যের কাছে নত হতে হয় সবাইকে-
জীবন সুন্দর
আকাশ-বাতাস পাহাড়-সমুদ্র
সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর
আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা
তবুও কি আজীবন বেঁচে থাকা যায়!
বিদায়ের সেহনাই বাজে
নিয়ে যাবার পালকি এসে দাঁড়ায় দুয়ারে
সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে
এই যে বেঁচে ছিলাম
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যেতে হয়
সবাইকে
অজানা গন্তব্যে
হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি
অজান্তেই চমকে ওঠি
জীবন, ফুরালো নাকি!
এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে…

মালতিবালা বালিকা বিদ্যালয় ____জয় গোস্বামী

বেনীমাধব বেনীমাধব তোমার বাড়ী যাব
বেনীমাধব তুমি কি আর আমার কথা ভাব?
বেনীমাধব মোহনবাঁশিঁ তমাল তরুমূলে
বাজিয়েছিলে আমি তখন মালতি স্কুলে।
ডেস্কে বসে অঙ্ক করি ছোট ক্লাশ ঘর
বাইরে দিদিমনির পাশে দিদিমনির বর।
আমি তখন নবম শ্রেণী আমি তখন শাড়ী
আলাপ হলো বেনীমাধব সুলেখাদের বাড়ী।
বেনীমাধব বেনীমাধব লেখাপড়ায় ভাল
শহর থেকে বেড়াতে এলে আমার রং কালো।
তোমায় দেখে একদৌড়ে পালিয়ে গেলাম ঘরে
বেনীমাধব আমার বাবা দোকানে কাজ করে।
কুঞ্জে অলি গুঞ্জে তবু ফুটেছে মঞ্জুরী
সন্ধে বেলা পড়তে বসে অংকে ভুল করি।
আমি তখন নবম শ্রেণী আমি তখন ষোল
ব্রীজের ধারে বেনীমাধব লুকিয়ে দেখা হলো।
বেনীমাধব বেনীমাধব এতদিন পরে
সত্যি বল সেসব কথা এখনও মনে পড়ে?
সে সব কথা বলেছ তুমি তোমার প্রেমিকাকে?
আমি শুধু একটি দিন তোমার পাশে তাকে
দেখেছিলাম আলোর নীচে অপূর্ব সে আলো
স্বীকার করি দুজনকেই মানিয়ে ছিল ভালো।
জুড়িয়ে দিল চোখ আমার পুড়িয়ে দিল চোখ
বাড়ীতে এসে বলেছিলাম ওদের ভাল হোক।
রাতে এখন ঘুমাতে যাই একতলা ঘরে
মেঝের উপর বিছানাপাতা জোসনা এসে পড়ে।
আমার পরে যে বোন ছিল চোরা পথের বাঁকে
মিলিয়ে গেছে জানিনা আজ কার সাথে থাকে।
আজ জুটেছে কাল কী হবে কালের ঘরে পানি
আমি এখন এপাড়ার সেলাই দিদিমনি।
তবুও আগুন বেনীমাধব আগুন জ্বলে কই;
কেমন হবে আমিও যদি নষ্ট মেয়ে হই?

"ভালবাসি, ভালবাসি" ___সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ধরো কাল তোমার পরীক্ষা,রাত জেগে পড়ার টেবিলে বসে আছ,
ঘুম আসছে না তোমার
হঠাত করে ভয়ার্ত কন্ঠে উঠে আমি বললাম-
ভালবাস? তুমি কি রাগ করবে?
নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো ক্লান্ত তুমি, অফিস থেকে সবে ফিরেছ,
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত..
খাওয়ার টেবিলে কিছুই তৈরি নেই,
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ঘর্মাক্ত আমি তোমার
হাত ধরে যদি বলি- ভালবাস?
তুমি কি বিরক্ত হবে?
নাকি আমার হাতে আরেকটু
চাপ দিয়ে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো দুজনে শুয়ে আছি পাশাপাশি,
সবেমাত্র ঘুমিয়েছ তুমি
দুঃস্বপ্ন দেখে আমি জেগে উঠলাম শশব্যস্ত
হয়ে তোমাকে ডাক দিয়ে যদি বলি-ভালবাস?
তুমি কি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে?
নাকি হেসে উঠে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি দুজনে,মাথার উপর
তপ্ত রোদ,বাহন
পাওয়া যাচ্ছেনা এমন সময় হঠাত দাঁড়িয়ে পথ
রোধ করে যদি বলি-ভালবাস?
তুমি কি হাত সরিয়ে দেবে?
নাকি রাস্তার সবার দিকে তাকিয়ে কাঁধে হাত
দিয়ে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো শেভ করছ তুমি,গাল কেটে রক্ত পড়ছে,এমন সময়
তোমার এক ফোঁটা রক্ত হাতে নিয়ে যদি বলি-
ভালবাস?
তুমি কি বকা দেবে?
নাকি জড়িয়ে তোমার গালের রক্ত আমার
গালে লাগিয়ে দিয়ে খুশিয়াল
গলায় বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো খুব অসুস্থ তুমি,জ্বরে কপাল পুড়েযায়,
মুখে নেই রুচি, নেই কথা বলার
অনুভুতি,
এমন সময় মাথায় পানি দিতে দিতে তোমার
মুখের
দিকে তাকিয়ে যদি বলি-ভালবাস?
তুমি কি চুপ করে থাকবে?নাকি তোমার গরম
শ্বাস আমার
শ্বাসে বইয়ে দিয়ে বলবে ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো যুদ্ধের দামামা বাজছে ঘরে ঘরে,প্রচন্ড
যুদ্ধে তুমিও অঃশীদার,
শত্রুবাহিনী ঘিরে ফেলেছে ঘর
এমন সময় পাশে বসে পাগলিনী আমি তোমায়
জিজ্ঞেস করলাম-
ভালবাস? ক্রুদ্ধস্বরে তুমি কি বলবে যাও?
নাকি চিন্তিত আমায় আশ্বাস
দেবে,বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো দূরে কোথাও যাচ্ছ
তুমি,দেরি হয়ে যাচ্ছে,বেরুতে যাবে,হঠাত
বাধা দিয়ে বললাম-ভালবাস? কটাক্ষ করবে?
নাকি সুটকেস ফেলে চুলে হাত
বুলাতে বুলাতে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো প্রচন্ড ঝড়,উড়ে গেছে ঘরবাড়ি,আশ্রয় নেই
বিধাতার দান এই
পৃথিবীতে,বাস করছি দুজনে চিন্তিত তুমি
এমন সময় তোমার
বুকে মাথা রেখে যদি বলি ভালবাস?
তুমি কি সরিয়ে দেবে?
নাকি আমার মাথায় হাত রেখে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো সব ছেড়ে চলে গেছ কত দুরে,
আড়াই হাত মাটির নিচে শুয়ে আছ
হতভম্ব আমি যদি চিতকার করে বলি-ভালবাস?
চুপ করে থাকবে?নাকি সেখান থেকেই
আমাকে বলবে ভালবাসি, ভালবাসি..
যেখানেই যাও,যেভাবেই থাক,না থাকলেও দূর
থেকে ধ্বনি তুলো
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি..
দূর থেকে শুনব তোমার কন্ঠস্বর,বুঝব
তুমি আছ,তুমি আছ
ভালবাসি, ভালবাসি

"পাগলী,তোমার সঙ্গে" ____জয় গোস্বামী

পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন
এর চোখে ধাঁধা করব,ওর জল করে দেব কাদা
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু'কদম।
অশান্তি চরমে তুলব,কাকচিল বসবে না বাড়িতে
তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন
পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।
মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে, ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান
লোকাসান পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ ব্যন্জ্ঞন
পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব প্যারামাউন্ট হলে
মাঝে মাঝে মুখ বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে 'কী মিথ্যুক' কাটাব জীবন।
এক হাতে উপায় করব,দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি
রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম
লটারি, তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন কাটাব
লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন।
দেখতে দেখতে পুজো আসবে, দুনিয়া চিত্কার করবে সেল
দোকানে দোকানে খুঁজব রূপসাগরে অরূপরতন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজোসংখ্যা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন।
কবিত্ব ফুড়ুত্ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে
বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প উপন্যাসোপম
পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন।
নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে
ধরা পড়ব তোমার হাতে, বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজা বেদি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন।
দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে
একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব
আমি কিনব ফুল,তুমি ঘর সাজাবে যাবজ্জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন।
সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা
হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন।
এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে
এটা ভাঙলে ওটা গড়ব,ঢেউ খেলব দু দশ কদম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে 'ভোর ভয়োঁ' কাটাব জীবন।

"আবদার" __ রেদোয়ান মাসুদ

আমাকে একটু ঘুমাতে দাও
সেই কত রাত ঘুমাতে পারি না।
আমাকে এক ফোটা জল দাও
সেই কতকাল বৃষ্টি দেখি না।
আমাকে একটু অক্সিজেন দাও
সেই কতকাল শ্বাস প্রশ্বাস চলে না।
আমাকে একটু জ্যোৎস্না দাও
সেই কতকাল আলো দেখি না।
আমাকে এক বিন্দু শিশির দাও
সেই কতকাল পা ভিজাতে পারি না।
আমাকে একটি গোলাপ দাও
সেই কতকাল গন্ধ নেই না।
আমাকে একটু্ শ্রোত দাও
সেই কতকাল নদীতে ভাসি না।
আমাকে একটু স্পর্শ দাও
সেই কতকাল তোমাকে ছুই না।
আমাকে একটি আকাশ দাও
সেই কতকাল মনের সুখে উড়ি না।
আমাকে একটি পথ দাও
সেই কতকাল তোমাকে নিয়ে হাটি না।
আমাকে একটি চাঁদ দাও
সেই কতকাল তোমাকে নিয়ে হাসি না।
আমাকে একটি আয়না দাও
সেই কতকাল তোমাকে দেখিনা।
আমাকে একটি মোহনা দাও
সেই কতকাল দুজন এক হই না।
আমাকে একটু ভালোবাসার সুযোগ দাও
সেই কতকাল ভালবাসতে পারি না।

মনে থাকবে? — আরণ্যক বসু

পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দু'জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের জল গড়াবে,
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি ক'রে দুচোখ ভ'রে থাকবো চেয়ে...
মনে থাকবে?
এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন
মনে থাকবে?
আমি হবো উড়নচন্ডি
এবং খানিক উস্কোখুস্কো
এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেব
তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে?
পরের জন্মে কবি হবো
তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো।
তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে
নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে
গান বানিয়ে__
মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো...
মনে থাকবে?
আর যা কিছু হই বা না হই
পরের জন্মে তিতাস হবো
দোল মঞ্চের আবীর হবো
শিউলিতলার দুর্বো হবো
শরৎকালের আকাশ দেখার__
অনন্তনীল সকাল হবো;
এসব কিছু হই বা না হই
তোমার প্রথম পুরুষ হবো
মনে থাকবে?
পরের জন্মে তুমিও হবে
নীল পাহাড়ের পাগলা-ঝোরা
গাঁয়ের পোষাক ছুড়ে ফেলে
তৃপ্ত আমার অবগাহন।
সারা শরীর ভ'রে তোমার হীরকচূর্ণ ভালোবাসা।
তোমার জলধারা আমার অহংকারকে ছিনিয়ে নিল।
আমার অনেক কথা ছিল
এ জন্মে তা যায়না বলা
বুকে অনেক শব্দ ছিল__
সাজিয়ে গুছিয়ে তবুও ঠিক
কাব্য করে বলা গেল না!
এ জন্ম তো কেটেই গেল অসম্ভবের অসঙ্গতে
পরের জন্মে মানুষ হবো
তোমার ভালোবাসা পেলে
মানুষ হবোই__ মিলিয়ে নিও!
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে...
বলতে ভীষণ লজ্জা করছে
ভীষণ ভীষণ লজ্জা করছে
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে...
মনে থাকবে?

সবার সুখে __জসীমউদ্দীন

সবার সুখে হাসব আমি
কাঁদব সবার দুখে,
নিজের খাবার বিলিয়ে দেব
অনাহারীর মুখে।
আমার বাড়ির ফুল-বাগিচা,
ফুল সকলের হবে,
আমার ঘরে মাটির প্রদীপ
আলোক দিবে সবে।
আমার বাড়ি বাজবে বাঁশি,
সবার বাড়ির সুর,
আমার বাড়ি সবার বাড়ি
রইবে না ক দুর।

“কষ্ট” _ রেদোয়ান মাসুদ

আমাকে কষ্ট দিতে চাও?
দাও!
আমি কষ্ট নিতেই এসছি।
আমাকে কাঁদাতে চাও?
কাঁদাও!
আমি কাঁদতেই এসেছি।
আমাকে হারাতে চাও?
হারাও!
আমি হারতেই এসেছি।
আমাকে সাগরে ভাসাতে চাও?
ভাসাও!
আমি ভাসতেই এসেছি।
আমাকে পোড়াতে চাও?
পোড়াও!
আমি পুড়তেই এসছি।
আমাকে বুকে টেনে নাও
নিবে না?
আমি সবকিছু সয়েই এসছি।

‘‘বর্ষার দিনে’’ ___রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায় -
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।।
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার -
জগতে কেহ যেন নাহি আর।।
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি-অনুভব -
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।।
বলিতে ব্যথিবে না নিজ কান,
চমকি উঠিবে না নিজ প্রাণ।
সে কথা আঁখিনীরে মিশিয়া যাবে ধীরে,
বাদলবায়ে তার অবসান -
সে কথা ছেয়ে দিবে দুটি প্রাণ।।
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার!
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।।
আছে তো তার পরে বারো মাস -
উঠিবে কত কথা, কত হাস।
আসিবে কত লোক, কত-না দুখশোক,
সে কথা কোনখানে পাবে নাশ -
জগৎ চলে যাবে বারো মাস।।
ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।।

"ফেরিওয়ালা" __হেলাল হাফিজ

কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।

লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,
আলোর মাঝে কালোর কষ্ট
মাল্টি কালার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।
ঘরের কষ্ট পরের কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট
দাড়ির কষ্ট
চোখের বুকের নখের কষ্ট,
একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।
প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট
অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,
ভুল রমণী ভালোবাসার
ভুল নেতাদের জনসভার
তাসের খেলায় দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।
দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট
পথের এবং পায়ের কষ্ট
অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট
কষ্ট নেবে কষ্ট।
আর কে দেবে আমি ছাড়া
আসল শোভন কষ্ট,
কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন
আমার মত ক’জনের আর
সব হয়েছে নষ্ট,
আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট

ফিরে এসো __ রেদোয়ান মাসুদ

তুমি ফিরে এসো
ঐ দূর আকাশের রোদ্র হয়ে
চারিদিকে আলোকিত করে
এই হ্নদয়ের সকল ধোয়াশ দূর করে।
.
তুমি ফিরে এসো
ঐ দূর আকাশে কুয়াশা হয়ে
নির্জন অন্ধকারে অতি গোপনে
আমায় ছুয়ে দিতে।
.
তুমি ফিরে এসো
ঐ দূর আকাশের বৃষ্টি হয়ে
চারিদিকে ভিজিয়ে দিয়ে
আমার হ্নদয় খানি সতেজ করে।
.
তুমি ফিরে এসো
ঐ অথৈই সাগরের জল হয়ে
চারিদিক প্লাবিত করে
আমার পুরো হ্নদয় ভরে।
.
তুমি ফিরে এসো
ঐ রাত্রি বেলার অন্ধকার হয়ে
নির্জনে বলব কথা
অতি গোপনে গোপনে।
.
তুমি ফিরে এসো
দূর বিদেশের অতিথি পাখি
কত আপ্যায়ন করবো তোমায়
অনেক দিন পরে পেয়ে।
.
তুমি ফিরে এসো
বসন্তের কোকিলের গানের সূরে
শুনব তোমার মধুর সূর
হ্নদয় মন পুলকিত করে।
.
তুমি ফিরে এসো
ঐ দূর আকাশে চাঁদ হয়ে
সারা রাত দেখব তোমায়
আকাশের দিকে তাকিয়ে।
.
তুমি ফিরে এসো
ঐ জ্যোৎস্না রাতের জোনাকি হয়ে
দু’হাত দিয়ে ধরে রাখব তোমায়
জীবন জীবনের তরে।
.
তুমি ফিরে এসো
ঐ দূর বন-জঙ্গলের পাখি হয়ে
মনের খাঁচায় রাখব তোমায়
আজীবন বন্দি করে।
.
তুমি ফিরে এসো
ঐ ফুলের বাগানের গন্ধ হয়ে
সুভাষিত গন্ধে আমার
হ্নদয় খানি যাবে ভরে।
.
তুমি ফিরে এসো
চুর্ন বিচূর্ন এই হ্নদয়ে
ভাঙ্গা মনে লাগবে জোড়া
কোন দিনও যাবেনা ছিড়ে।

"তবু মনে রেখো" ___রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

তবু মনে রেখো, যদি দূরে যাই চলি,
সেই পুরাতন প্রেম যদি এক কালে
হয়ে আসে দূরস্মৃত কাহিনী কেবলি—
ঢাকা পড়ে নব নব জীবনের জালে।
তবু মনে রেখো, যদি বড়ো কাছে থাকি,
নূতন এ প্রেম যদি হয় পুরাতন,
দেখে না দেখিতে পায় যদি শ্রান্ত আঁখি—
পিছনে পড়িয়া থাকি ছায়ার মতন।
তবু মনে রেখো, যদি তাহে মাঝে মাঝে
উদাস বিষাদভরে কাটে সন্ধ্যাবেলা,
অথবা শারদ প্রাতে বাধা পড়ে কাজে,
অথবা বসন্ত-রাতে থেমে যায় খেলা।
তবু মনে রেখো, যদি মনে প’ড়ে আর
আঁখিপ্রান্তে দেখা নাহি দেয় অশ্রুধার।

আমি খুব অল্প কিছু চাই ! ___হুমায়ুন আহমেদ

আমাকে ভালবাসতে হবে না,
ভালবাসি বলতে হবে না.
মাঝে মাঝে গভীর আবেগ
নিয়ে আমার ঠোঁট
দুটো ছুয়ে দিতে হবে না.
কিংবা আমার জন্য রাত
জাগা পাখিও
হতে হবে না.
অন্য সবার মত আমার
সাথে রুটিন মেনে দেখা
করতে হবে না. কিংবা বিকেল বেলায় ফুচকাও
খেতে হবে না. এত
অসীম সংখ্যক “না”এর ভিড়ে
শুধু মাত্র একটা কাজ
করতে হবে আমি যখন
প্রতিদিন এক বার “ভালবাসি” বলব
তুমি প্রতিবার
একটা দীর্ঘশ্বাস
ফেলে একটু
খানি আদর মাখা
গলায় বলবে “পাগলি”

"কাজলা দিদি" ___যতীন্দ্রমোহন বাগচী

বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই-
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;-
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে,
আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে।
ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল!
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই-
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে’
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই
রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই?

‘‘যাতায়াত’’ ____হেলাল হাফিজ

মনে থাকবে?
কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।
কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না,
কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না; কেউ
জানেনা।
নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম
পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক
দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও,
কেই বলেনি ভালো থেকো সুখেই থেকো।
যুগল চোখে জলের ভাষায় আসার সময় কেউ বলেনি
মাথার কসম আবার এসো।
জন্মাবধি ভেতরে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো
শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক,
চৈত্রাগুনে জ্বলে গেলো আমার বুকের গেরস্থালি
বললো না কেউ তরুন তাপস এই নে চারু শীতল কলস।
লন্ডভন্ড হয়ে গেলাম তবু এলাম।
ক্যাঙ্গারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোয়
আমিও ঠিক তেমনি করে সভ্যতা আর
শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই দুঃসময়ে এতোটা পথ
একলা এলাম শুশ্রূষাহীন।
কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালোবাসি।

"তুমি ফিরবে" ___সমরেশ মজুমদার

তুমি ফিরবে কোন একদিন
হয়তো নীলিমায় হারানো কোন এক নিষ্প্রভ
বেলায়। নতুবা কোন এক নবীন হেমন্তে,
এক নতুন দিনের নির্মল খোলা হাওয়ায়।
অথবা কোন এক শ্রাবণের দিনে
অহরহ ঝরা ঘন কাল মেঘ বৃষ্টির
মুহু মুহু নির্ঝর খেলায়।
তুমি ফিরবে কোন এক রাতে
পূর্ণিমার ভরা জোছনায়।
তুমি ফিরবে জানি বহুদিন পরে
হয়তো বা হাজার বছর পরে।
কোন এক নিঃস্ব হৃদয়ে,
লক্ষ্য প্রাণের ভিড়ে, তুমি ফিরবে।
বহুরুপে সেই প্রাণে, অনেক নবীনের ভিড়ে,
তোমার আমার গড়া ভালবাসার নীড়ে!

"ফেরিওয়ালা" __হেলাল হাফিজ

কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।

লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,
আলোর মাঝে কালোর কষ্ট
মাল্টি কালার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।
ঘরের কষ্ট পরের কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট
দাড়ির কষ্ট
চোখের বুকের নখের কষ্ট,
একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।
প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট
অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,
ভুল রমণী ভালোবাসার
ভুল নেতাদের জনসভার
তাসের খেলায় দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।
দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট
পথের এবং পায়ের কষ্ট
অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট
কষ্ট নেবে কষ্ট।
আর কে দেবে আমি ছাড়া
আসল শোভন কষ্ট,
কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন
আমার মত ক’জনের আর
সব হয়েছে নষ্ট,
আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট

“শুধু ভালবাসি তোমায়” ___রেদোয়ান মাসুদ

হাজার কাজের ভিড়ে ভুলতে চেয়েছি তোমায়
পারিনি ভুলতে তোমায় স্মৃতিগুলো শুধু কাঁদায়।
আকাশে বাতাসে শুনি শুধু তোমারি প্রতিধ্বনি
মেঘের আড়ালে ভেসে ওঠে তোমারি প্রতিচ্ছবি।
রাতের বেলা ঘুমের জন্য চোখ বুজে শুয়ে থাকি
ঘুম আসেনা চোখে তাই সারা রাত জেগে থাকি।
বিছানা থেকে উঠে জানালার ফাকে দেই উকি
জ্যোৎস্না ছড়ানো চাঁদের মাঝে তোমায় খুজি,
যখনি দেখি চাঁদের মাঝে তুমি নেই আছে এক
চড়কা কাটা সাদা কাপড় পড়া নুয়ে পড়া বুড়ি
হয়তোবা বয়সের ভাড়ে লুটিয়ে পরেছো তুমি
এই ভেবে সারা রাত তোমার জন্য বসে থাকি।
হঠাৎ কানে ভাসে মসজিদের আযানের ধ্বনি
তারি মাঝে কান ঝাঝা করে পাখির কলকাকলি
এভাবে রাতের পরে রাত আসে সময় চলে যায়
চারিদিক থেকে জলের রাশি চোখ ভাসিয়ে যায় ।
সকাল বেলা বিছানা থেকে উঠে মাঠে চলে আসি
দূর্বা ঘাসের উপর পড়ে থাকা শিশিরে পা রাখি।
তখনি বুকের মাঝে শুরু হয়ে যায় কাপাকাপি
যে শিশির বিন্দুতে তোমার পায়ের স্পর্শ লাগলে
শিহরিত হয়ে বলতে আমায়, তোমায় ভালবাসি।
আজও সেই কথা মনে পরলে ভেসে যায় আঁখি
তুমি কি এখনও সকাল বেলা শিশিরে পা রাখ?
শিশির বিন্দুর স্পর্শ লাগলে আমার কথা ভাব ?
এখন কি শিশির বিন্দুর স্পর্শে তোমার শরীর
শিহরিত হয়ে ভালবাসার অনুভূতি সৃষ্টি হয় না?
কি বলবো তোমায়, বলার ভাষাটুকুও আজ নেই
যে ভালবাসার জন্য প্রহর গুনতে কখন কথা হবে
কখন আকাশে মেঘের ফাকে চাঁদের দেখা মিলবে।
এখনও মেঘের ফাকে অনায়াসেই চাঁদের দেখা পাই
চাঁদকে পেলেও মনে হয় কি যেন আজ পাশে নেই
নিরবে কান পেতে তোমার কথা শুনতে না পাই
এ দেহের প্রতিটি রক্ত মাংস জমাট বেধে যায়।
হৃদযন্ত্রের সকল ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মরার উপক্রম হয়।
একদিন হয়তো পৃথিবী তার সকল মায়া ছেড়ে
ফেলে দিবে আমায় অচিন দেশের কোন এক ধারে।
সেই দিনের অপেক্ষায় আজ আমার দিন চলে যায়
জীবনের শেষ বেলায় এসে একবার হলেও এ মন
তোমার আকাশে,তোমার বাতাসে বিচরণ করতে চায়
যদি কখনও ভালবেসে থাকো এই অভাগা আমায়
ভাসিয়ে যাও শেষবার আমায় তোমার ভালবাসায়
শান্তি পাবে আত্মা আমার অচিন দেশের আস্তানায়।
পৃথিবীর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে শুধু তোমার প্রতীক্ষায়
কখন এসে বলবে তুমি “শুধু ভালবাসি তোমায়”।