Sunday, April 12, 2015

"গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ" ___রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ
আমার মন ভুলায় রে ।
ওরে কার পানে মন হাত বাড়িয়ে
লুটিয়ে যায় ধূলায় রে ।।
ও যে আমায় ঘরের বাহির করে,
পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে -
(মরি হায় হায় রে)
ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে
যায় রে কোন্ চুলায় রে ।
ও কোন্ বাঁকে কী ধন দেখাবে,
কোন্খানে কী দায় ঠেকাবে-
কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে
ভেবেই না কুলায় রে ।।

"অভিশাপ" – কাজী নজরুল ইসলাম

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মরু কানন গিরি,
সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
যেদিন আমায় খুঁজবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
স্বপন ভেঙ্গে নিশুত রাতে, জাগবে হঠাৎ চমকে
কাহার যেন চেনা ছোয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে-
জাগবে হঠাৎ ছমকে,
ভাববে বুঝি আমিই এসে
বসনু বুকের কোলটি ঘেষে
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শুন্য শয্যা মিথ্যা স্বপন
বেদনাতে চোখ বুজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না,
ব’লবে সবাই – “সেই যে পথিক, তার শেখানো গান না?”
আসবে ভেঙে কান্না!
প’ড়বে মনে আমার সোহাগ,
কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
অশ্রু-হারা কঠিন আঁখি
ঘন ঘন মুছবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ -
কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!
বুকের মালা ক’রবে জ্বালা
চোখের জলে সেদিন বালা
মুখের হাসি ঘুচবে -
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
থাকবে সবাই – থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
আসবে শিশির-রাত্রি!
থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
বঁধুর বুকের পরশনে
আমার পরশ আনবে মনে-
বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না’ক আর সে-
তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে,
আসবে না’ক আর সে!
প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে
মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে,
মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়!
সেই স্মৃতি তো ঐ বিছানায়
কাঁটা হ’য়ে ফুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে,
সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-
দুলবে তরী রঙ্গে,
প’ড়বে মনে সে কোন্ রাতে
এক তরীতে ছিলেম সাথে,
এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,
নদীর দু’ধার এমনি আঁধার
তেমনি তরী ছুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ,
আমার মতন কেঁদে কেঁদে হয়ত হবে অন্ধ-
সখার কারা-বন্ধ!
বন্ধু তোমার হানবে হেলা
ভাঙবে তোমার সুখের মেলা;
দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর,
বইতে প্রাণের শান- এ ভার
মরণ-সনে বুঝবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ফুটবে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী,
আকাশ-ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাঁদনী-
চৈতী-রাতের চাঁদনী।
ঋতুর পরে ফিরবে ঋতু,
সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু!
চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়,
আমার মতন চোখ ভ’রে চায়
যে-তারা তা’য় খুঁজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,
কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন-
টুটবে যবে বন্ধন!
পড়বে মনে, নেই সে সাথে
বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে-
আপনি গালে যাচবে চুমা,
চাইবে আদর, মাগবে ছোঁওয়া,
আপনি যেচে চুমবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হানত্
সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত হ’য়ে শ্রান–
আসবে তখন পান’।
হয়ত তখন আমার কোলে
সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে,
আপনি সেদিন সেধে কেঁদে
চাপবে বুকে বাহু বেঁধে,
চরণ চুমে পূজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

"কৃষ্ণকলি' __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ‐চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে, মুক্তবেণী পিঠের’পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐
চোখ।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ‐পানে হানি যুগল ভুরু শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐
চোখ।
পূবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে, ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা, মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে, আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐
চোখ।
এমনি করে কাজল কালো মেঘ জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া আষাঢ়মাসে নামে তমাল‐বনে।
এমনি করে শ্রাবণ‐রজনীতে হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐
চোখ।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ‐চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস, লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐
চোখ।

তোমাকে ভালবাসি ____ রেদোয়ান মাসুদ

আমি কখনও বলবোনা
তোমাকে ভালবাসি
হৃদয় ডাকছে তোমার কাছে আসি
শুধু আমার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ
চোখ কি বলে?
তখনই বুঝবে তুমি
কতটা ভালবাসি তোমায় আমি।

আমি কখনও বলবোনা
তোমাকে ভালবাসি
কাছে এসো একবার
তোমাই দেখি।
শুধু কান দিয়ে নিরবে আমার কথা শুনো
শ্রুতি কেমন, কন্ঠ কি বলে ?
তখনই বুঝবে তুমি
কতটা ভালবাসি তোমায় আমি।
আমি কখনও বলবোনা
তোমাকে ভালবাসি
কাছে এসো
মন খুলে হাসি।
শুধু আমার হাতে একবার স্পশ করে দেখ
কাপছে তোমার হৃদয় খানি
আর তখনই বুঝবে তুমি
কতটা ভালবাস আমায় তুমি।

“আর কত ভালবাসলে ভালবাসবে আমায়” _____ রেদোয়ান মাসুদ

আর কত ভালবাসলে
ভালবাসবে তুমি আমায়?
আর কত কাঁদলে
গলবে তোমার হৃদয়?
আর কত রাত জাগলে
বুঝবে তুমি আমায়?
আর কত অপেক্ষা করলে
শেষ হবে অপেক্ষা আমার?
আর কত দিন কাটলে
আসবে তুমি কাছে আমার?
আর কত পোড়ায়ে
খাটি করবে আমার হৃদয়?
আর কত সাগরে ভাসলে
দেখা দিবে তুমি আমায়?
আর কত পরীক্ষার পর
শেষ হবে আমাকে জানার?
আর কত ভালবাসলে
ভালবাসবে তুমি আমায়?
আর কত কাঁদলে
গলবে তোমার হৃদয়?

বঁধু, মিটিলনা সাধ __কাজী নজরুল ইসলাম

বঁধু, মিটিলনা সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়
তাই আবার বাসিতে ভালো আসিব ধরায়।
আবার বিরহে তব কাঁদিব
আবার প্রণয় ডোরে বাঁধিব
শুধু নিমেষেরি তরে আঁখি দুটি ভ’রে
তোমারে হেরিয়া ঝ’রে যাব অবেলায়।
যে গোধূলি-লগ্নে নববধূ হয় নারী
সেই গোধূলি-লগ্নে বঁধু দিল
আমারে গেরুয়া শাড়ি
বঁধু আমার বিরহ তব গানে
সুর হয়ে কাঁদে প্রাণে প্রাণে
আমি নিজে নাহি ধরা দিয়ে
সকলের প্রেম নিয়ে দিনু তব পায়।

"আমায় নহে গো" __কাজী নজরুল ইসলাম

আমায় নহে গো ভালোবাসো শুধু
ভালোবাসো মোর গান
বনের পাখিরে কে চিনে রাখে
গান হলে অবসান ।

চাদেরে কে চায় জোসনা সবাই যাচে
গীত শেষে বীণা পড়ে থাকে ধূলি মাঝে
তুমি বুঝিবে না
আলো দিতে কত পোড়ে
কত প্রদীপের প্রাণ ।
যে কাটা লতার আখিঁজল
ফুল হয়ে উঠে ফুটে
ফুল নিয়ে তার দিয়েছো কি কিছু
শূন্য পত্র পুটে ।
সবাই তৃষ্ণা মেটায় নদীর জলে
কি তৃষা জাগে সে নদীর হিয়া তলে
বেদনার মহা সাগরের কাছে করো সন্ধান ।